কলকাতা: রঞ্জি ট্রফি ফাইনাল ম্যাচের চতুর্থ দিনের শেষে বাংলার স্কোর ৩৫৬/৬। সরু দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটছে বাংলা। আর চাই ৭১ রান, তা হলেই ৩০ বছর পরে রঞ্জি ট্রফি আসবে বাংলায়।
সৌরাষ্ট্রের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ছিল ৪২৫ রান। শুক্রবার ম্যাচের শেষদিন। সৌরাষ্ট্র চাইবে নিজেদের ঘরের মাঠে বাংলার বাকি চার ব্যাটসম্যানদের দ্রুত ফেরাতে। বাংলার ব্যাটসম্যান বলতে সেই ভাবে মুকেশ কুমার। কারণ ঈশান পোড়েল ও আকাশদীপ সিং এখনও সেই অর্থে পরীক্ষিত নন। আসল ম্যাচে খেলে দিলে অন্য কথা।
জুটিতে লুটি দুই পাড়ার বন্ধু
উইকেটে রয়েছেন একই জেলার, আরও ভাল করে বললে একই পাড়ার দুই ক্রিকেটার অনুষ্টুপ মজুমদার (৫৮) ও অর্ণব নন্দী (২৮)। দুইজনেরই বাড়ি হুগলীর চন্দননগরে। চলতি মরসুমে স্বপ্নের ফর্মের ওপর দিয়ে যাচ্ছেন অনুষ্টুপ।
তিনি রেলের চাকরি ছেড়ে সৌরভ গাঙ্গুলির অনুরোধে এবার বাংলার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওড়িশা ম্যাচের পরে সেমিফাইনালে কর্ণাটক ম্যাচেও তাঁর দুর্দান্ত লড়াকু সেঞ্চুরির সুবাদে বাংলা অক্সিজেন পায়, এবং ম্যাচও পকেটে পুড়ে নিয়েছিল। যে কারণে বাংলা শিবির থেকে অনুষ্টুপকে বলা হচ্ছে ‘ক্রাইসিস ম্যান’।
দিনের শেষে বাংলার কোচ কাম মেন্টর অরুণ লালও জানিয়েছেন, ‘‘রুকু (অনুষ্টুপ) তো দারুণ খেলেছে আমাদের হয়ে। সত্যিকারের একজন প্রতিভা, যে দাম পেল না। তবে এই ম্যাচে অর্ণবও দেখাচ্ছে ওর জাত আলাদা। পাঞ্জাব ম্যাচেও দারুণ খেলেছিল, যেহেতু অভিজ্ঞ, আর ওকে আমরা দলেই নিয়েছি যাতে করে আট নম্বরে নেমে দলকে ভরসা দিতে পারে। এমনকি বোলিং করতে পারে পঞ্চম বোলার হিসেবে। সেই কাজটি এবার যথাযথভাবে পালন করেছেন অর্ণব।’’
ম্যাচ নয়, আগে জেতো হৃদয়
চাপ কাটাতে বাংলার মেন্টর মিডিয়া প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, আমি দলের ছেলেদের বলেছি জেতার জন্য নয়, দিল জেতার জন্য খেলো। জিততে হবে, এমন কোনও কথা নেই। জয় এলে আসবে, কিন্তু আমি চাই ওরা বাংলার মানুষের দিল জিতুক। সেটাই আমি ড্রেসিংরুমে গিয়ে বলে এসেছি।
অরুণ এও বলছেন, আমি জাদকুর নই। কেউ যদি বলে আমি সব করে দিয়েছি, বাকিরা কিছু করেনি। আমি তাঁদের মূর্খ বলতে চাই। এই বাংলা দলের মতো প্রতিভাবান দল আমি দেখিনি। এর আগেও আমি বাংলার কোচ ছিলাম, সেইসময় বাংলার ক্যাপ্টেন ছিল রোহন (গাভাসকার)। কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলছি এই দলটি বাকি দলগুলির থেকে আলাদা।
চিন্তার কারণে ক্যান্সার থেকে ফিরে আসা বাংলার ‘মৃত্যঞ্জয়ী কোচ’ বলছেনও, ‘‘গত তিনদিন তো রাতে ঘুমাইনি ভাল করে। চিন্তায় ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, তারপর ঘুম আসতে দুই ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। উঠে দেখি সকাল হয়ে গিয়েছে, তারপর আর ঘুম হয়।’’ তারপরেই জানিয়েছেন, আজও রাতে ঘুম হবে না। চিন্তা তো হবেই। তবে ছেলেদের বলেছি মাঠে নেমে উপভোগ করো, জেতার জন্য ভেবে মাঠে নামবে না, তাতে চাপ চলে আসবে।
সুদীপ ও ঋদ্ধিও কাড়লেন নজর
চলতি মরসুমে অফ ফর্মের কারণে বাদও পড়েছিলেন। তারপর ঘরোয়া সিএবি লিগে ভাল খেলে ফের বাংলা দলে ফিরে এসেছিলেন সুদীপ চ্যাটার্জি। তিন নম্বরে নেমে ২৪১ বলের সাহায্যে তাঁর ৮১ রান বাংলাকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করেছে। পাশাপাশি ঋদ্ধিমান সাহা (১৮৪ বলে ৬৪) ফের প্রমাণ করলেন তিনি সবসময়ই ঋষভ পন্থের থেকে ভাল ব্যাটসম্যান। শেষমেশ সুদীপ ফেরেন ধর্মেন্দ্র জাদেজার বলে ও ঋদ্ধিকে ফেরান মিডিয়াম পেসার প্রেরক মানকাদ। এমনকি অলরাউন্ডার শাহবাজ আমেদও ১৬ রানে আউট হয়ে যান।
করোনার থাবা এবার রঞ্জিতে
কেন্দ্র ক্রীড়া মন্ত্রক থেকে নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত নিল শুক্রবার রঞ্জি ফাইনাল ম্যাচের শেষ অর্থাৎ পঞ্চমদিন খেলা দর্শকশূন্য মাঠে হবে। এমনিতেই ম্যাচে সেরকম কোনও দর্শক হচ্ছিল না। মেরেকেটে হাজার দুয়েক মানুষ খেলা দেখতে আসছিলেন।
এবার করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এমন সিদ্ধান্তের কারণে স্টেডিয়ামের গেটে তালা দেওয়া থাকবে শুক্রবার ম্যাচের সময় করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা তাদের নির্দেশিকা দিয়েছে। তার বাইরে নয় বিসিসিআই-ও।