কলকাতা: রঞ্জি ট্রফি ফাইনাল জমে উঠেছে। রাজকোটের মাঠে সৌরাষ্ট্রের প্রথম ইনিংসে ৪২৫ রানের জবাবে বাংলা দল তৃতীয় দিনের শেষে করেছে ১৩৪/৩। উইকেটে রয়েছেন সুদীপ চ্যাটার্জি (৪৭) ও ঋদ্ধিমান সাহা (৪)। প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন দলের দুই ওপেনার সুদীপ ঘরামি (২৬), অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ (৯) এবং মনোজ তিওয়ারি (৩৫)।
অরুণ লালের রেসিপি…
ম্যাচের যা গতিপ্রকৃতি, তাতে করে খেলা প্রথম ইনিংসের হতে চলেছে মোটামুটি পরিষ্কার। তবে বাকি দুইদিন ম্যাচের ওপর অনেককিছুই নি্র্ভর করছে। কারণ সৌরাষ্ট্র সরাসরি জিততে চাইলে তারা বাংলাকে বৃহস্পতিবার দ্রুত অলআউট করে নিজেরা ফের একটা রান করে লক্ষ্য রাখতে চাইতে পারে বিপক্ষ দলের কাছে। সেই হিসেবেই বাংলার কোচ কাম মেন্টর অরুণ লাল জানালেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমাদের ব্যাটসম্যানদের উইকেটে টিকে থাকতেই হবে। কারণ না হলে ম্যাচে ফেরা মুশকিল। যত বেশি সম্ভব উইকেটে পড়ে থাকতে হবে, এবং সেটি এই উইকেটে অসম্ভব কিছু নয়।’’
অরুণ লালের মতো নামী প্রাক্তন ক্রিকেটারের ধারণা, এই পরিস্থিতিতে বাংলার দরকার একটা একশো রানের জুটি। সেটি ঝদ্ধি কিংবা সুদীপ হতে পারে, অথবা অনুষ্টুপ কিংবা অন্য কেউ, সেটি না হলে ২৯১ রানের লক্ষ্য টপকানো সম্ভব হবে না। তিনি দলের ব্যাটসম্যানদের সতর্ক করতে চান, অহেতুক কোনও তাড়াহুড়ো নয়, ভাল বলগুলিতে সতর্ক থাকতে হবে। মন থেকে বলতে হবে আমরা কোনওমতেই উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসব না।’’
বাংলার কোচ অবশ্য দলের দুই ওপেনারের ব্যর্থতা মানতে পারছেন না। তিনি জানিয়ে রেখেছেন, ঈশ্বরণ ভাল খেলছিল আজ, কিন্তু ভুল আউটের শিকার হয়েছে। এগুলি হতেই থাকবে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যদিও সুদীপের মনোভাব তাঁর ভাল লেগেছে। এই কারণেই তিনি ড্রেসিংরুমে ফিরে বলতে চান, উইকেটে রান রয়েছে, কিন্তু দরকার একটু সতর্কতা।
বিতর্কিত আউট ঈশ্বরণ…
বাংলার অধিনায়ক এবার রঞ্জি ট্রফিতে ছন্দে নেই। এই নিয়ে বাংলা শিবিরে কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে তিনি অহেতুক এবার অধিনায়কত্বের চাপে পড়ে ব্যাটে রান পাচ্ছেন না। এই কথা খানিক মেনেও নিয়েছেন অরুণ লাল। তিনি জানান, ঈশ্বরণের বয়স অল্প, চাপ তো একটু থাকবেই।
রাজকোটে অবশ্য বুধবার ভালই শুরু করেছেন বঙ্গ দলনেতা। কিন্তু আম্পায়ারের ভুল লেগ বিফোরের সিদ্ধান্তে তাঁকে ফিরতে হয়। ডিআরএস-র সুবিধে থাকলেও বল ট্র্যাকিং সিস্টেম নেই। সেই কারণে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন সটান। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি লেগস্টাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। এই নিয়ে রাজকোটের হোটেল থেকে বেশ রাগান্বিত দেখা গেল মনোজ তিওয়ারিকে। তিনি টেলিফোনে জানালেন, অভি ভালই ফর্মে ছিল, কিন্তু ভুল আউটের শিকার হতে হয়েছে। না হলে আমরা আজ আরও ভাল অবস্থায় শেষ করতাম। ঈশ্বরণ নিজেও মিডিয়াকে নিজের হতাশা গোপন করেননি। তিনি জানান, রঞ্জি ফাইনালের মতো ম্যাচে কেন বল ট্র্যাকিংয়ের সিস্টেম থাকবে না, এটাই অদ্ভুত বিষয়।
মনোজের স্বপ্ন...
দল আদৌ চাপে নেই, এই পরিস্থিতিতে সহজেই বাংলা প্রথম ইনিংসের লিড নিয়ে নেবে, এমন কথাই জোর দিয়ে জানালেন মনোজ তিওয়ারি। তিনি বলেছেন, আমাদের দলে আট নম্ভর পর্যন্ত ব্যাটসম্যান। আর এবার প্রতি ম্যাচেই দলের মিডলঅর্ডার টেনেছে, এই ম্যাচেও তাই হবে। এখনও অনুষ্টুপ, শাহবাজরা রয়েছে। খেলছে ঋদ্ধিমান ও সুদীপের মতো অভিজ্ঞ। তিনি মানছেন তাঁর এদিনের ডেলিভারিটা আচমকা নিচু হয়ে যেতেই তিনি আউট হয়ে গিয়েছেন। মনোজকে উইকেট দিতে হয়েছে চিরাগ জানির বলে।
মনোজ মনে করছেন দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের সংগ্রহে দল ভাল জায়গায় পৌঁছে যাবে। এমনকি দলের বোলাররা ফিরতি ইনিংসে চাপে ফেলে দেবে সৌরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানদের।
ভরসার নাম সেই অনুষ্টুপ
বাংলা দলের ভরসার নাম অবশ্যই অনুষ্টুপ মজুমদার। যিনি ব্যাটিং করতে আসবেন ছয় নম্বরে। এর আগে বাংলার এই সিনিয়র ব্যাটসম্যান ওড়িশা ম্যাচে ১৫৭ রানের ইনিংস খেলে লড়াই করেছিলেন। এমনকি সেমিফাইনালে কর্ণাটক ম্যাচেও প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রানের লড়াকু ইনিংসের সুবাদে দলের পতন রোধ করেন। এবারও কী তাই হবে? বাংলার কোচ অরুণ মনে করছেন, প্রতি ম্যাচে অনুষ্টুপ উদ্ধার করবে তা ঠিক নয়। বাকিদেরও চেষ্টা করতে হবে। মনোজও বলছেন, অনুষ্টুপ আমাদের কাছে ভরসা হয়ে উঠেছে। ও যা ছন্দে রয়েছে, তাতে এখানেও সফল হবে।