কলকাতা : মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনা এলেন, দেখলেন, জয় করলেন আই লিগ। ভারতে প্রথম মরসুমে কাটিয়েই চার ম্যাচ আগে থাকতেই মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন করে দিলেন।
সবুজ মেরুন কর্তারা যদি তাঁকে নাও রাখেন, কোনও ব্যাপার নয়। তাঁর জন্য ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ রেডি করে বসে আছে ভারতের অন্যান্য নামী ক্লাব। একবার ‘যাব’ বললেই তাঁর বিমানের টিকিট কেটে তাঁর নিউটাউনের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেবে।
সত্যিই কী কিবু মোহনবাগান ছাড়ছেন? তাঁর হৃদয় সমর্থকদের কথা ভেবে ভারাক্রান্ত। বারবার প্রতিদিনের প্র্যাকটিসের সকালের কথা মনে পড়ছে স্প্যানিশ কোচের। কত আকুতি নিয়ে ছেলেমেয়ের দল তাঁর হাত ধরে বলত, ‘কিবু স্যার, আমাদের শেষ আই লিগটা চ্যাম্পিয়ন করে দিন।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে নিউটাউনের অভিজাত রেস্তোঁরায় খেলআপডেটস–কে একান্ত সাক্ষাৎকারে কিবু ধরা দিলেন অন্যভাবে। সেখানে এল ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, কেন মোহনবাগানে এসেছিলেন, এমন অনেক কথাই।
আপনি মোহনবাগানকে প্রথমবার কোচিং করাতে এসেই চ্যাম্পিয়ন করলেন। নয়া মরসুমে দল যখন আবার নতুন চুক্তি করতে যাচ্ছে, সেইসময় আপনি কর্তাদের ভাবনায় কোচ হিসেবে দ্বিতীয় পছন্দ। প্রথম নামটি আন্তোনিও হাবাসের। খারাপ লাগছে না?
ভিকুনা : দেখুন, আমি পেশাদার ও বাস্তববাদী মানুষ। আমার বাবা (হোসে আন্তোনিও) একটা কথা আমাকে প্রায়ই বলতেন, কিবু ভবিষ্যতের কথা তুমি ভাবতে যেও না, সেটি ভাবার জন্য কেউ একজন রয়েছেন। তুমি নিজের কাজটি ঠিকঠাক করো। ব্যর্থ হলে যাতে তুমি ঈশ্বরকে বলতে পার, আমার তো কোনও দোষ ছিল না, তাও তুমি আমার জন্য এই কষ্টটা দিলে কেন?
এখানেই একটা মানুষের চরম প্রাপ্তি। খারাপ যে একদম লাগেনি, তা বলব না। লেগেছে, আবার মনকে এটাও বলেছি মোহনবাগান কর্তাদের এটার জন্য কিছু করারও নেই। কারণ এটিকে-র সঙ্গে যা চুক্তি হয়েছে, তাতে কোচ ও ফুটবলারদের বিষয়টি এটিকে-র কর্ণধাররা ঠিক করবে। সেই কারণে হাবাস এগিয়ে রয়েছেন। তবে সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছে, এটিও বলার সময় আসেনি, দেখা যাক কী হয়। তবে এটিও ঠিক, যে দলটা আমি হাতে পেয়েছিলাম, যাদের পরিশ্রম ও ঘাম আমাকে খেতাব দিল, তাদের যদি আমি হাতে না পাই, সেটিও আমার কাছে চরম হতাশার হবে।
আপনার মোহনবাগানে আসার কারণ কী ছিল? কে এই ক্লাবের কথা বলেছিলেন আপনাকে?
কিবু: আমি একটা নতুন চ্যালেঞ্জ খুঁজছিলাম যেটি একটু অন্যরকম হবে। পোল্যান্ডের বাইরে বেরতে চাইছিলাম। গ্রিসের একটা ফুটবল এজেন্ট আমাকে ইমেল করে জানায়, ভারতে মোহনবাগান ভাল একজন কোচ খুঁজছে। আমি সেই মতো আমার প্রোফাইল এজেন্টকে দিয়েছিলাম। তারপর ওই এজেন্টই জানাল যে, মোহনবাগান আমাকে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। সেই মতো এখানে চলে আসি।
মোহনবাগানে এসেই নানারকম প্রতিকূলতার সম্মুখিন হয়েছেন। লিগে, ডুরান্ডেও রানার্স হয়েছিলেন। বাংলাদেশে হেরে ফিরলেন। তারপর আই লিগে চার্চিলের কাছে ২-৪ গোলে হার।
ভিকুনা : ভাগ্যিস সেইসময় আমার নামে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি ওঠেনি। উঠলে আরও চাপে পড়ে যেতাম। আমার ভাল লেগেছে, সেইসময় কর্তাদের ভূমিকায়। বিশেষ করে দেবাশিসদা ও বসুর (সৃঞ্জয়) কথা আলাদাভাবে বলতে চাই। পাশে পেয়েছি বাপ্পাদা-কেও (সঞ্জয় ঘোষ)। ওঁরা আমাকে বলতেন, কোচ আপনি এই নিয়ে কিছু ভাববেন না। যা ভাববেন, তাই করবেন। এই মানসিক জোরটা না দিলে হয়তো কাজটি কঠিন হতো।
আমি তারপর লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্র্যাকটিসের সময় বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। ফুটবলারদের বলতাম, ব্যর্থতার কথা ভেবে খেলতে নেমো না। ব্যর্থ হলে আমাকে দেখিয়ে দেবে, সাফল্য পেলে তোমাদের সবকিছু। আমি পাশেই থাকব না। তবে সেইসময় ১৬ জনের দল জোগাড় করতেও সমস্যা হয়েছে। স্থানীয়দের দিয়ে খেলিয়েছি, ভারতীয়দের সুযোগ দিয়েছি। রিজার্ভ বেঞ্চটাকে ঢেলে সাজিয়েছিলাম। আই লিগে সেটাই কাজ করেছে। একটা সেট দল হাতে পেয়েছিলাম, সেটাই সোনা ফলিয়েছে।
সম্ভাবনা যা তৈরি হয়েছে, তাতে কেরালা ব্লাস্টার্সে যোগ দেওয়া সময়ের অপেক্ষা আপনার। তাই তো?
ভিকুনা: আমার এপ্রিল পর্যন্ত মোহনবাগানের সঙ্গে চুক্তি। তার আগে আমি চুক্তি করতে গেলে সমস্যা হবে। সেটি আমি চাইছিও না। আই লিগের এখনও চারটি ম্যাচ আমাদের বাকি। করোনা ভাইরাস নিয়ে যা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ক্রমশ, ফের লিগ কবে শুরু হবে কেউ জানে না। আমিও এই ব্যাপারে দ্বিধায় রয়েছি। সামনের পরিস্থিতি কোনদিনে দিক নির্দেশ করে, সেটি বুঝেই বাকিটা ভাবব। তবে যাই সিদ্ধান্ত নেব, সেটি ভেবেই, দুম করে কিছু করব না। আমার সঙ্গে কেরালার কথা হয়েছে, সবটাই মৌখিক, ফাইনাল কিছু হয়নি। মরসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি এখন মোহনবাগান নিয়েই ভাবতে চাই।