কলকাতা: সিএবি সচিব পদে স্নেহাশিস গাঙ্গুলি। বাংলা দলের কোচ কাম মেন্টরের পদে অরুণলাল। দলের স্পিন পরামর্শদাতা উৎপল চ্যাটার্জি। দলের নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান পদে প্রাক্তন ক্রিকেটার পলাশ নন্দী — যিনি ৩০ বছর আগের দলের সহকারী কোচ ছিলেন। মূল কোচ ছিলেন পারমার।
১৯৮৯-৯০ মরসুমে রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন বাংলা দলের কোনও না কোনও সদস্য বর্তমান বাংলা দলের সঙ্গে জড়িত।
তা হলে কী মস্তিকপ্রসূত এই ভাবনা যে খেতাবী গন্ধ মাখা একটি দলের পুরনো সদস্যদের ফিরিয়ে এনে বাজিমাত?
উৎপল নিজেই উচ্ছ্বসিত এই প্রসঙ্গে কথা বলতে পেরে। কর্ণাটককে বড় রানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার আনন্দে বলছিলেন, ‘‘জানি না বিষয়টি কাকতালীয় হতে পারে। কিন্তু এটাও ঠিক, যে দলে এতগুলি চরিত্র সেই দলের খেতাব দেখেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে সিএবি সঠিক কাজটাই করেছে।’’
বাংলার প্রাক্তন দলনায়ক ও অন্যতম নামী স্পিনার জানালেন, ‘‘এই বাংলা দলের পেস লাইন আপ আরও ভাল আমার মনে হয়। কারণ আমাদের দলেও রাজীব শেঠ, সাগরময় সেনশর্মা ও দত্তাত্রেয় মুখার্জির মতো পেসার ছিল। কিন্তু বাংলা দলের এই তিন পেসার যেভাবে ধারাবাহিকতার সঙ্গে চলতি মরসুমে পারফরম্যান্স করল, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।’’
স্নেহাশিস বললেন, ‘‘অরুণলালকে আমরা আবারও কোচ কাম মেন্টর হিসেবে ফিরিয়ে আনতে পেরে ভাল লাগছে। আর এজন্য প্রশংসা প্রাপ্য মহারাজের (সৌরভ গাঙ্গুলি)। মহারাজ নিজে উদ্যোগ নিয়ে পিগিকে ফিরিয়ে এনেছে। আর অরুণ নিজেও যেমন প্যাশন নিয়ে ক্রিকেট খেলেছে, তেমনি কোচিংও করান আবেগ দিয়ে। তাই সাফল্যকে ও কাছ থেকে দেখেছেন।’’
‘‘ডেভিড (উৎপল ) হল জাত ফাইটার। ওঁর উপস্থিতি পুরো দলকে চাঙ্গা করে দিয়েছে। মনোজও এবার অফ ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু ডেভিড এসে মনোজকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’’
স্নেহাশিস গাঙ্গুলি , সিএবি সচিব
বাংলার তিন পেসারের গৌরবগাথা অবশ্য শুধু সেমিফাইনালে কর্ণাটক ম্যাচেই নয়। বরং শেষ তিনটি ম্যাচেই বাংলার তিন পেসার ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমার ও আকাশদীপ সিং। তিনটি ম্যাচ মিলিয়ে মোট ৩৪টি উইকেট তুলেছে বাংলার পেসাররা।
ম্যাচে মোট ২০টি উইকেট তুলেছেন বাংলার তিন পেসার
কর্ণাটক ম্যাচেই মোট ২০টি উইকেট তুলেছেন এই ত্রয়ী। শেষদিন মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন্সে কর্ণাটককে মধ্যাহ্নভোজের আগেই শেষ করে দেওয়ার মূলে মুকেশ।
তিনিও জানালেন, “আমাদের দলের তিন পেসারই কোনও না কোনও ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিতে পেরেছে। তাই আমাদের সহজ হয়েছে এবারের সাফল্য।”
মুকেশ মোট ছয় উইকেট পেয়েছেন দ্বিতীয় ইনিংসে, প্রথম ইনিংসে পেয়েছিলেন দুটি।
পোড়েলকে বলা হচ্ছে ‘বাংলার ম্যাকগ্রথ”। তাঁর দুরন্তে স্পেলে নাভিশ্বাস ছুটেছে বিপক্ষ দলের নামী তারকাদের। দুই ইনিংসেই তিনি ফিরিয়েছেন লোকেশ রাহুলকে।
“মঙ্গলবার আমি সেরকমভাবে ছন্দে ছিলাম না, সেই দুর্বলতা ঢেকে দিয়েছে মুকেশ। এটাই একটা ভাল দলের দৃষ্টান্ত যে কেউ ব্যর্থ হলে বাকি জন তাঁর ব্যর্থতা ঢেকে দেবে।’’
পোড়েল অবশ্য প্রথম ইনিংসে কর্ণাটককে শেষ করে দেওয়ার মূলে ছিলেন। তিনিও সবমিলিয়ে পেয়েছেন ৭টি উইকেট।
কর্ণাটক ম্যাচের সেরা অনুষ্টুপ মজুমদারও মানছেন, বাংলার এই পেস লাইনআপ শেষ ১০বছরের সেরা।
‘‘এই পেস লাইনআপের দারুণ বৈচিত্র্য, সেই কারণেই সেরা। ঈশানের লাইন টু লাইন বোলিং যেমন অস্ত্র, তেমনি আকাশদীপের ইয়র্কার ও মুকেশের ইনসুইংগার, একটি দলের সবচেয়ে বড় প্লাসপয়েন্ট। তাছাড়া এই পেসারদের বিরুদ্ধে বিপক্ষ কোনও দলই ২৫০ রান করতে পারেনি এই মরসুমে, সেটিও আমাদের কাছে ইতিবাচক দিক,’’ বললেন অনুষ্টুপ ।