কলকাতা: চলতি রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে বাংলাকে চাপে ফেলার জন্য সৌরাষ্ট্রের দুই নামী ব্যাটসম্যান হলেন চেতেশ্বর পূজারা ও অর্পিত ভাসাভাদা।
পূজারা ও অর্পিতের মধ্যে এই জুটি নতুন নয়। তাঁরা এর আগেও বহু ক্ষেত্রে সৌরাষ্ট্রের হয়ে স্মরণীয় পার্টনারশিপ গড়েছেন। দুইজনে ভাল বন্ধুও, একইসঙ্গে থাকতেন রাজকোটের রেল কলোনিতে।
আরও একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, এই দুই নামী ক্রিকেটারই বাংলার দেবু মিত্রের কাছে ক্রিকেটের পাঠ নিয়েছেন।
৬৭ বছরের দেবুর কাছে অর্পিতকে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর বাবা। পূজারার উত্থানের পিছনে যেমন তাঁর বাবা অরবিন্দ, তেমনি অর্পিতের ক্ষেত্রেও তাই, ভামুসভাই না থাকলে অর্পিতের যাত্রাপথ এতটা মসৃণই হতো না।
ছাত্ররা ভাল খেলুক, তিনি চান, কিন্তু অবশ্যই বাংলা ৩০ বছর পরে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হোক, এও মনেপ্রাণে চাইছেন সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন কোচ দেবু।
তাঁর দুই প্রিয় ছাত্র বাংলার বোলারদের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তিনি মাঝেমধ্যেই খোঁজ নিয়েছেন দুই ছাত্রের।
সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দেবু বলছিলেন, ‘‘অর্পিত বরাবরই ট্যালেন্ডেড ক্রিকেটার। একবার তো ব্যাটে রান পাচ্ছিল না। আমি সেইসময় সৌরাষ্ট্র দলের কোচ, রাজকোটের একটা হোটেলে রয়েছি। আচমকা দেখি রাত নয়টার সময় অর্পিত এসে হাজির। এসেই আমাকে জানাল, স্যার আমি আপনার সামনে একটু শ্যাডো করতে চাই, আমার ঠিক হচ্ছে কিনা না, দয়া করে দেখে দিন। আমি তো অবাক। তারপর হোটেলের ছাদে গিয়ে অর্পিতকে প্র্যাকটিস করাতে নিয়ে গেলাম। পরের ম্যাচেই দিল্লির বিরুদ্ধে ৯২ রানের ইনিংস খেলেছিল।’’
সৌরাষ্ট্রকে টানা দশবছর কোচিং করিয়েছেন। ২০১২-১৩ মরসুমে তাঁর কোচিংয়ে সৌরাষ্ট্র রঞ্জিতে ফাইনালে ওঠে। তারপর গত আটবছরে সৌরাষ্ট্র চারবার ফাইনালে খেলেছে। এই কৃতিত্ব সাম্প্রতিককালে কোনও দলের নেই।
সেই প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে বলছিলেন, ‘‘সৌরাষ্ট্র দলের ভিত আমি তৈরি করেছি, এটা আমি বলতে চাই না। নিজের কথা নিজে বলব কী করে? তবে আমার কিছুটা অবদান তো রয়েইছে।’’ দেবু একসময় বাংলা দলের ক্রিকেটারও ছিলেন, সেটি ১৯৬৮-৬৯ সাল। এমনকি তিনি কোচ ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি ও তাঁর দাদা স্নেহাশিসেরও।”
কোচ হিসেবে বাংলা দলের দেখভালের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তিনি অবশ্য খুশি সৌরাষ্ট্র দলের উত্থানে।
“যে দলে পূজারা, রবীন্দ্র জাদেজা, জয়দেব উনাদকাট, রবীন উত্থাপার মতো তারকা রয়েছে, সেই দলে প্রতিভার অভাব নেই। আমি গিয়ে শুধু ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করেছিলেন। আর ক্রিকেট সংস্থাকে বলে একটা অ্যাকাডেমি গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। সেই অ্যাকাডেমি থেকেই ক্রিকেটার বেরচ্ছে এখন।”
দেবু মিত্র
তিনি বলছিলেন, ‘‘বাংলাকে ফাইনালে উঠতে গেলে পূজারাদের ব্যাটিং দেখে শিখতে হবে। কী পরিমান ধৈর্য্য রেখে বাংলার বোলারদের চাপে ফেলল, সেটি দেখিয়েছে ওরা। আমার তো মনে হয় বাংলা ফাইনালে উঠেছে দুই ক্রিকেটারের জন্য,এক অনুষ্টুপ মজুমদার ও অন্যজন শাহবাজ আমেদ। ওরা যেভাবে দুটি ক্ষেত্রে বিপদের হাত থেকে দলকে উদ্ধার করে ম্যাচ জিতিয়েছে, সেটাই পার্থক্য হয়ে গিয়েছে।’’
বাংলা চ্যাম্পিয়ন হলে খুশি হবেন, পাশাপাশি চান সৌরাষ্ট্রে তাঁর ছাত্রদের সাফল্যও। ‘‘বাংলায় থাকি, তাই বাংলার খারাপ তো চাইতে পারব না, তবে সৌরাষ্ট্রের প্রতি আমার দুর্বলতাও রয়েছে, ওদের ক্রিকেট তো আমারই হাতে গড়া।’’