মোহনবাগানকে চার ম্যাচ আগে থাকতেই আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করেও তিনি এই দুঃসময়েও পরিবারের পাশে থাকতে পারছেন না।
কলকাতা : শরীরটাই শুধু কলকাতায়, না হলে পুরো মনপ্রাণটাই কিবু ভিকুনার পড়ে রয়েছে স্পেনে নিজের দেশে। স্ত্রী কাসিয়া বিয়েলকা সহ বাবা-মা সবাই উত্তর স্পেনের জিজুরকিল শহরে থাকেন। সেখানেও করোনা ভাইরাসের কোপে পুরো শহরটাই লকডাউন। পরিবারের সঙ্গে থাকলে মনের অবস্থা একরকম হতে পারত, কিন্তু কিছু করারও নেই।
কলকাতায় নিউটাউনে নিজের ফ্ল্যাটে থাকতে হচ্ছে। শনিবার বিকেলে ফোনেই সবুজ মেরুনের সফল কোচ জানালেন, ‘‘আমি পড়েছি উভয় সঙ্কটে। একদিকে পরিবারের জন্য চিন্তা হচ্ছে, অন্যদিকে এখনও আই লিগ শেষ হল না। আদৌ হবে কিনা এই পরিস্থিতিতে আমি জানি না।’’
যদিও বিমান চলাফেরা স্বাভাবিক থাকলে দেশে ফেরার একটা চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তাও হবে না সরকারের ফতোয়ায়। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদেশে বিমান যাবে না, আবার আসবেও না। সেই কারণেই মহা সমস্যায় পড়েছেন কোচ।
“আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি স্ত্রী ও পরিবারের বাকিদের সঙ্গে। আমার ভাই-ও পাশেই রয়েছে, এটাই একমাত্র আমার কাছে স্বস্তির। তবুও পরিবারের একজন হিসেবে একটা দায়িত্ব তো থেকেই যায়।”
কিবু ভিকুনা
ভিকুনার জন্যও বাড়ির সদস্যরা চিন্তা করছেন, সেটিও বললেন। ‘‘দেখুন, ইউরোপে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ইতালি ও স্পেনে ছেয়ে গিয়েছে। সরকারের উদাসিনতায় মহামারীর আকার নিয়েছে। আর আমার বাড়িতে যেহেতু মা ও বাবা দু’জনেই প্রবীন, তাই চিন্তাটা বেশি,’’ জানালেন ৪৮ বছরের স্প্যানিশ কোচ।
‘‘আমার স্ত্রী-র সঙ্গে দিনে অনেকবারই ভিডিও কল করি। ওরা আমাকে বলে সাবধানে থাকতে, কিন্তু এখানে তো পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক। আমার চিন্তা কাটাতেই স্ত্রী বারবার বলে ওখানে নাকি সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে!’’
একই তিমিরে বেইতিয়ারাও
নিউটাউনে কিবুরই প্রতিবেশী মোহনবাগানের তিন স্প্যানিশ ফুটবলার — জোসেবা বেইতিয়া, ফ্রান মোরান্তে ও ফ্রান গঞ্জালেজ। তাঁরা রয়েছেন বলেই ‘অন্তর্মুখী ভিকুনা’ কিছুটা স্বস্তিতে।
বেইতিয়া, দুই ফ্রানেরই স্ত্রী ও সন্তানরা তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন। স্পেনের বাড়িতে রয়েছেন অন্যান্য আত্মীয়স্বজনরা। বেইতিয়া যেমন থাকেন গুইপুজকোয়া নামে নর্দান স্পেনেরই এক প্রদেশে। সেখানে অসুস্থ ঠাকুমাকে নিয়ে তিনি প্রবল চিন্তায়। বাড়িতে যদিও মা-বাবা রয়েছেন, আর বাড়িতে এসে রয়েছেন তাঁর এক বোন। সেই কারণেই একটু হলেও টেনশনমুক্ত। তবে কিবুনা মারফৎ জানালেন, স্পেনে তাদের পাড়ায় অনেকেই এখন কোয়ারেন্টিনে রয়েছে, তাদের পরিবারের কেউ এখনও সেই অবস্থায় না থাকলেও ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
মোহনবাগানের অপর এক স্প্যানিশ তারকা ফ্রান গঞ্জালেজ, যিনি সবুজ মেরুন সমর্থকদের কাছে পরিচিত ‘দ্য বস’ নামে। তিনি গোল করতেও জানেন, করাতেও। স্পেনে তাঁর বাড়ি কর্ডোবাতে। সেখানে তাঁর বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তাঁর পরিবারের কেউ আক্রান্ত না হলেও পুরো শহরই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গঞ্জালেজ অবশ্য প্রতিনিয়ত ফোনে কথা বলছেন স্পেনে তাঁর পরিবারের সঙ্গে। এখন যদিও স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে ঘরবন্দী দিনই কাটাতে হচ্ছে কলকাতায়।