কলকাতা: আমরা চোখের সামনে কোচিং করাতে দেখেনি আলেক্স ফার্গুসনকে, আমরা দেখেনি আর্সেন ওয়েঙ্গারকে। কিন্তু আমরা ভারতীয় ফুটবলাররা কোচ হিসেবে দেখেছি প্রদীপ কুমার ব্যানার্জিকে। তাঁকে দেখে, তাঁর সান্নিধ্যে এসে আমরা ধন্য হয়েছি।
প্রদীপদাকে নিয়ে যত বলব, ততই কম বলা হবে। তিনি এমন এক মহীরুহ যাঁর নিশ্চিন্ত ছায়ায় শীতল হয়েছেন ময়দানের সব ফুটবলাররাই।
অমল দত্ত যদি ভারতীয় ফুটবলের কোচ হিসেবে জোস পেকারম্যান হন, প্রদীপদা হলেন কার্লোস বিলার্দো। অমলদা ফুটবলার তুলে আনার কারিগর ছিলেন। প্রদীপ ব্যানার্জি ছিলেন ম্যাচের ট্যাকটিক্স করার বিশারদ। কিভাবে কঠিন ম্যাচ দূর্বল দল নিয়ে জিতে দেখাতে হয়, প্রদীপদা ছিলেন ‘মাস্টার-পিস’।
প্রদীপদার কোচিংয়ের প্রধান বিশেষত্ব ছিল তিনি কোনওসময়ে হারতে চাইতেন না। তাঁর কাছে ভাল ফুটবলের থেকে জয় বেশি প্রাসঙ্গিক ছিল। সেই কারণেই ভারতীয় ফুটবলে তাঁর মতো ক্লাব স্তরে এত বেশি সাফল্য কোনও কোচ পাননি।
তিনি ছিলেন শৃঙ্খলাপরায়ণ কোচ। যেভাবে খেলার আগে ও প্র্যাকটিসের সময় ফুটবলারদের উদীপ্ত করতে পারতেন নানা গল্প করে, তা সকলের কাছে অনুপ্রেরণা ছিল। তাঁর ভোকালটনিক সর্বজনবিদিত। তিনি ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের রক্ত গরম করে দিতে পারতেন। তাঁর কথা শুনে বাড়তি অ্যাড্রিন্যালিন ঝরতো।
ময়দানে বহু ফুটবলারকে তিনি নতুন জীবনদান করেছিলেন। যেমন এই প্রসঙ্গে সকলের আগে নাম আসবে সুভাষ ভৌমিকের।
১৯৭২ সালে সুভাষদা মোহনবাগান থেকে একপ্রকার অপমানিত হয়ে ১৯৭৩ সালে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছিলেন। সেইসময় ইস্টবেঙ্গলের কোচ ছিলেন প্রদীপদা। তিনি সুভাষদা-কে ব্যক্তিগতভাবে ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করেছিলেন। সেইসময় সুভাষদা একটু হলেও বিপথে পরিচালিত হয়েছিলেন, কিন্তু প্রদীপদা রিহ্যাব করে ভোম্বলদা (সুভাষের ডাকনাম)-কে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
নিজের বাড়িতে রেখে পুত্র স্নেহে সুভাষদাকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছিলেন। তারপর কত ম্যাচ যে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে জিতিয়েছেন সুভাষ ভৌমিক, তার বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ম্যাজিকের কাজ করেছিল প্রদীপ ব্যানার্জির ট্রেনিং। সুভাষদা-কে নিজের বাড়িতে রেখে তাঁকে পরিচর্যা করে সুস্থ করে তুলেছিলেন। তখনকার দিনে এমন ঘটনা ভাবাই যেত না।
এমনকি আমার ও বিদেশের উত্থানের পিছনেও ছিলেন পিকে-র মস্তিষ্ক। মানস-বিদেশ জুটি গড়ের মাঠে একদিনে তৈরি হয়নি। বহু অধ্যাবসায়, সংকল্প, পরিশ্রমের ফসলের পরে আমাদের এই চিরন্তন জুটি। যার রূপকার ছিলেন প্রদীপদা। আমরা ১৯৭৮ সালে সেবার মোহনবাগান ডুরান্ড কাপ ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে ২-০ গোলে হেরে যায়। এমনকি রোভার্স কাপেও হেরে গিয়েছিলাম সেবার।
কলকাতায় এসে পিকে ব্যানার্জি খুবই রেগে গিয়েছিলেন। তারপরই আমাকে ও বিদেশকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাদাভাবে প্র্যাকটিস করাতেন। আমাদের গতিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে গোলস্কোরিং গুণ বাড়তে পারে, সেটি আমাদের বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলেন। যে কারণে ১৯৭৯ সালে আমি কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পেরেছিলাম। তার জন্য প্রশংসা প্রাপ্য প্রদীপদা-র।
তিনি আমাদের জুটিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। আমি তো বলব, মাঠে যদি আমাদের জুটিকে সোনায় বাঁধিয়ে রাখার কাজটি প্রসূণ ব্যানার্জি, গৌতম সরকার, মহম্মদ হাবিবদের মতো মাঝমাঠের তারকারা করতে পারেন, তা হলে মাঠের বাইরে সেই জুটিকে সার্থক রূপ দিয়েছিলেন কোচ পি কে।
তিনি শুধু বড় কোচই ছিলেন, তাই নয়। ১৯৫৮ সালে কলকাতা লিগে ইস্টার্ন রেলকে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে তাঁর অবদান ছিল সিংহভাগ। বড় ফুটবলার হলেই বড় কোচ হতে পারেন না, এমন মিথকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন প্রদীপ ব্যানার্জি।
Asamanya lekha Manasda… Ekjon Guru koto baro ter proman hoy ter chattra der ter proti agadh Shraddhya o Bhalobasha dekhe.