কলকাতা: দ্বৈরথ হওয়ার কথা ছিল চেতেশ্বর পূজারা বনাম ঈশান পোড়েলের। কিন্তু কার্যত সেই লড়াই দেখাই গেল না। বরং রাজকোটের মাঠে রঞ্জি ট্রফি ফাইনালের প্রথমদিন নায়কের ভূমিকায় অবতির্ণ বাংলারই অন্য এক পেসার আকাশদীপ সিং।
দিনের শেষে সৌরাষ্ট্র ২০৬ রান ৫ উইকেটের বিনিময়ে। তবুও একটা আশঙ্কা থাকছে, এই ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে যদি সৌরাষ্ট্র ৪০০ রানও করে দেয়, তা হলে কী হতে পারে?
সৌরাষ্ট্র টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেওয়ার পরেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল খেলা হবে ব্যাটিং পিচে। কারণ সৌরাষ্ট্রের অভিজ্ঞ কোচ কারসন ঘাউড়ি জানেন বোলিং পিচ দেওয়া মানেই বঙ্গ পেস ত্রয়ীর বিষে বিলীন হয়ে যেতে হবে। তা সত্ত্বেও বাংলার পেসার আকাশদীপ সিং ৪১ রানে তিন উইকেট খেলার রং বদল ঘটিয়েছেন। বিপক্ষ দলের দুই ওপেনার শুরুটা ভাল করেছিলেন। সৌরাষ্ট্রের প্রথম উইকেট পড়ে ৮২ রানে, শিকার স্পিনার শাহবাজ আমেদের। তিনি হার্ভিক দেশাইকে ফেরান।
আহত পূজারাও ভয়ঙ্কর
সবাই যখন ভেবেছিলেন তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে আসবেন পূজারা। তখন শোনা যায় তিনি ডি-হাইড্রেশনে ভুগছেন, সঙ্গে প্রবল জ্বরও। তাও মাঠে নামেন ছয় নম্বরে, কিন্তু ২৪ বল খেলার পরে আর মাঠে থাকতে পারেননি। ফিরে যান ড্রেসিংরুমে।
রাজকোট থেকে বাংলার স্পিনারদের কোচ উৎপল চ্যাটার্জি বলছিলেন, পূজারা থাকা মানে বাড়তি চিন্তা তো থাকবেই, কিন্তু এও ঠিক যে শরীরে জলের অভাব রয়েছে বলে রোদে খেলা মানে কষ্টই। এরপরে কতটা কী করতে পারবে পূজারা, সন্দেহ রয়েছে।’’
আকাশদীপ মনে করছেন, ‘‘সৌরাষ্ট্রের ব্যাটিং লাইনআপ ভালই। তারচেয়েও বড় কথা, ওদের মিডলঅর্ডার এবার দারুণ ফর্মে রয়েছে। সেই কারণে মঙ্গলবার সকালের প্রথম একঘন্টা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’’
কলকাতায় বাংলার আরও এক নামী প্রাক্তন তারকা টেস্ট ক্রিকেটার প্রণব রায়ও জানালেন, “সৌরাষ্ট্র এই মুহূর্তে দেশের ক্রিকেটে সেরা দলগুলির একটা। তারচেয়েও বড় কথা এই দলটির মধ্যে এতটা শৃঙ্খলা ও ঐক্যবদ্ধ, সেই কারণে ম্যাচে বারবার ফিরেও আসতে পারে। দলের তিন তারকা দলটির বুনোট তৈরি করে রেখেছে। এক, পূজারা, বাকি দুইজন জয়দেব উনাদকাট ও শেলডন জ্যাকসন।’’ তবে পূজারা আহত হলেও ভয়ঙ্কর, সেটাই প্রণব মনে করাচ্ছেন বাংলার বোলারদের। ‘‘ওর ধৈর্য্য বাকিদের থেকে আলাদা করে দেয়।’’
রহস্য ভেদ করলেন উৎপল
বাংলার পেস বোলারদের মধ্যে এতটাই একটা একতা রয়েছে কেউ ব্যর্থ হলে বাকিরা সেটি পুষিয়ে দেন। সোমবার সেই ভাবে মেলে ধরতে পারেননি ঈশান ও মুকেশ কুমার। কিন্তু তাঁদেরই সতীর্থ আকাশদীপ ১৫ ওভার হাত ঘুরিয়ে তিন উইকেট পেলেন।
কিন্তু এই উইকেটে যেখানে ব্যাটিং সহায়ক পিচ, সেই পরিস্থিতিতে আকাশ কিভাবে সফল হলেন, তার রহস্য ভেদ করলেন উৎপল। বাংলা শিবির থেকে জানালেন, ‘‘আমরা এবার নেট প্র্যাকটিসে বিভিন্নরকম পিচে বোলারদের বোলিং করিয়েছি। পেস বোলারদের ঘূর্ণি পিচে, কিংবা আবার স্পিনারদের পেস সহায়ক পিচে, তাতেই কাজ হয়েছে। আকাশের বোলিংয়ে সুইং ভাবটা বেশি, তাই ও সব উইকেটেই সফল হওয়ার ক্ষমতা রাখে।’’ দলের দুই প্রারম্ভিক ব্যাটসম্যান অভি ব্যারোট (৫৪), বিশ্বরাজ জাদেজা (৫৪) আকাশদীপের বলে আউট হতেই চাপে পড়ে যায় ঘরের দল।
পিচই যখন ভিলেন
রঞ্জি ট্রফির ফাইনালের মতো ম্যাচে কেন একটা ঘরের দল নিজেদের সুবিধে মতো উইকেট পাবে, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার মেন্টর তথা কোচ অরুণ লাল।
তিনি খেলা শেষে মিডিয়া প্রতিনিধিদের বলেছেন, এ কী করে সম্ভব? এত গুরুত্বপূর্ণ পিচে ঘরের দল কেন সুবিধে মতো উইকেট বানাবে? তা হলে বোর্ড কী দেখছে? তিনি জানিয়েছেন, গ্রুপ ম্যাচে নিজেদের সুবিধে মতো উইকেট বানানোর সুবিধে দেওয়া যেতে পারে ঘরের দলকে। কিন্তু নকআউট পর্যায়ে এই সুবিধে যেন না পায়, সেটি দেখতে হবে বোর্ডকে।
অরুণের ধারণা, সৌরাষ্ট্র জানে বাংলার বোলিং খুবই শক্তিশালী, সেই কারণেই তারা নিজেদের ব্যাটসম্যানদের কথা ভেবে উইকেট তৈরি করেছে। এটি একেবারেই ক্রিকেটের পরিপন্থি। যদিও বাংলার ব্যাটসম্যানরা এই পিচের সুবিধে নিতে প্রস্তুত, সেই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন লালজি।