কলকাতা: চোখের সামনে দীপ দাশগুপ্ত সব যেন দেখতে পাচ্ছেন আজও। তিনি ছিলেন বাংলার অধিনায়ক। দলে ছিলেন সেবার সৌরভ গাঙ্গুলিও। এমনকি রঞ্জি ট্রফি ফাইনালের ওই ম্যাচে মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেছিলেন শচীন তেন্ডুলকার, রোহিত শর্মা, জাহির খান, অজিত আগরকারদের মতো তারকারা। মুম্বাইয়ের ওয়াঙখেড়ে স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে ঘরের মাঠে মুম্বাইয়ের জয় আসে ১৩২ রানে।
সেই শেষ, তারপর ১৩ বছর দিয়ে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বাংলা রঞ্জি ফাইনালে খেলতে পারেনি। ৯ মার্চ থেকে শুরু হওয়া রাজকোটে ফাইনাল এবার ফের সামনে খেতাব জয়ের সুযোগ।
এবার কী হবে, ৩০ বছরের খরা কী কাটবে বঙ্গ ক্রিকেটে? বাংলার সেই ম্যাচের দলনেতা নামী তারকা দীপ্ দাশগুপ্ত বলছিলেন, ‘‘আমি বাংলার সব ক্রিকেটারদের আবেদন করতে চাই যাতে ফাইনাল খেলতে নামছে ভেবে মাঠে না নামে। ফাইনাল খেলছি মানেই একটা প্রত্যাশা থাকবে, তাতে চাপ চলে আসবে মনে। যেভাবে গত ম্যাচগুলিতে দাপটে খেলেছে, সেই ভাবেই সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠে নামুক। কাজ হয়ে যাবে।’’
২০০৬-০৭ মরসুমের সেই বাংলা দলের মাত্র একজনই বর্তমান বাংলা দলে রয়েছেন। তিনি মনোজ তিওয়ারি। দলের সঙ্গে অবশ্য বোলিং কোচ রণদেব বসুও রয়েছেন, যিনি ওই বাংলা দলের পেস লাইনের অন্যতম ভরসা ছিলেন।
এছাড়া বাকিদের কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা ফাইনাল খেলতে নামার।
এটি কোনও কী সমস্যা হবে না? মুম্বাই থেকে রোহন গাভাসকারের বক্তব্য, ‘‘আমার মনে হয় এখন একটা ফিট দলই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পক্ষে আমার বাজি হতে পারে। সেই কারণেই আমি এগিয়ে রাখছি বাংলাকে। কেননা এই দলটি শারীরিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবে এগিয়ে রয়েছে। তারপর দলের সাপোর্ট স্টাফরা সবাই অভিজ্ঞ। লালজি (কোচ অরুণ লাল ) রয়েছেন, স্পিন কোচ ডেভিডদা (উৎপল চ্যাটার্জি), বোলিং কোচ রণ (রণদেব বসু) রয়েছে। তারপর মনোজ তো রয়েইছে, তাই নতুনদের তাতাতে এরাই যথেষ্ট।’’
রণদেব সেই বাংলা দলের অন্যতম ভরসা ছিলেন বোলিংয়ের। এমনকি তাঁর সতীর্থ ছিলেন অশোক দিন্দাও। রণ সেই দলের সঙ্গে বর্তমান দলের তুলনা টানতে গিয়ে জানালেন, ‘‘ওই দলে নামী তারকা বেশি ছিল বটে, কিন্তু এই দলটি খেলছে একেবারে ইউনিট হিসেবে। আর পিছিয়ে থেকে ম্যাচে বারবার ফিরে আসছে বলেই স্কোরবোর্ডে রান বেশি না থাকলেও বোলিং ও ফিল্ডিং দিয়ে বাজিমাত করে যাচ্ছে। এটাই এই দলের সাফল্যের রহস্য।’’
১৩ বছর আগে মুম্বাইয়ের সেই ফাইনাল ম্যাচে শচীনকে দুইবারই যিনি প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান, সেই প্রাক্তন স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী এখন বাংলা দলের অনুর্ধ্ব ২৩ কোচ।
তিনিও বললেন, ‘‘সেবার আমাদের টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেওয়া উচিত ছিল। তাও আমরা ৩২০ রানে মুম্বাইকে আটকে রেখেছিলাম। ম্যাচে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিল শচীন এবং ওয়াসিম জাফর। বাকিরা রান না পেলেও ওদের সেঞ্চুরি পার্থক্য গড়ে দেয়। পরে আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরে এসেছিলাম। মনোজ (৯৪) ও দাদি (সৌরভ) ৯০ করেছিল, কিন্তু তবুও আমরা মুম্বাইয়ের কাছে পারিনি স্রেফ মনোবলের দিক থেকে।’’
সৌরাশিস বলছিলেন, ‘‘বাংলা এই দলটিকে দেখে ভাল লাগছে। কিন্তু চিন্তার কথা একটাই এই দলের ব্যাটিং ফ্লপ করছে। সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একই ঘটনা ঘটলে সমস্যায় পড়বে দল। ওদের দলে শেলডন জ্যাকসন, চেতেশ্বর পূজারাদের মতো নামী তারকা রয়েছে। দলের বোলিং সব ম্যাচে কত টানবে? ওরা ব্যর্থ হলে বাকিদের পুষিয়ে দিতে হবে।’’
রোহনের মতো সৌরাশিসও জানালেন, ‘‘৯ মার্চ থেকে শুরু হওয়া রাজকোটে ফাইনাল ম্যাচে বাংলা যদি ঋদ্ধিমান সাহাকে পেয়ে যায়, তা হলে আরও শক্তিশালী হবে।’’